১৯৯৯ থেকে ২০১৮: হারিয়ে যাওয়া শৈশবের ৫০টি খেলা, টেলিভিশনের রঙে রাঙানো সময় আর টাচ মোবাইলের আগমনের গল্প।
SMTV MEDIA ডেস্ক স্মৃতিময় বিশেষ প্রতিবেদন |২০২৫ সময়টা ১৯৯৯ সাল। তখন ঘরে ঘরে মোবাইল নেই, ইন্টারনেট শব্দটা বহু ঘরে এখনো শোনা হয়নি। দিনটা শুরু হতো বই হাতে স্কুলে গিয়ে, আর শেষ হতো বিকেলের মাঠে খেলাধুলার মাধ্যমে। সন্ধ্যা নামলে কাকডাকা ঘরে ফিরতে হতো, নইলে মা’র বকা অপেক্ষা করত। আমাদের শৈশব মানেই ছিল খেলা, হাসি, রোদে পুড়ে মাঠে ঘুরে বেড়ানো, আর গরম দুপুরে গাছে চড়া। শহরের পাড়ায় হোক কিংবা গ্রামের মাঠে, খেলাধুলা ছিল আমাদের জীবনের অংশ—টিউশনি, হোমওয়ার্ক বা ক্লাসের চেয়েও বড় হয়ে উঠেছিল সেসব সময়।শৈশবের অমূল্য রত্ন — আমাদের সেই ৫০টি খেলা:১) গুল্লি (গুল্লা) ২) সাতছাড়া (সাত পাথর) ৩) চোর-পুলিশ ৪) বন্দি (বন্দি-বন্দি) ৫) রামসাম ৬) মারবেল (বিলি) ৭) ব্যাডমিন্টন ৮) ফুটবল ৯) ক্রিকেট ১০) কেরামবোর্ড ১১) দাবা ১২) হ্যান্ডবল ১৩) ভলিবল ১৪) কাবাডি ১৫) পুতুল খেলা ১৬) লাটিম ঘোরানো ১৭) রাবার ব্যান্ড খেলা ১৮) কানামাছি ভোঁ ভোঁ ১৯) লুকোচুরি ২০) দাঁড়িয়াবান্ধা ২১) কুমির ডাকাত ২২) গাছে ওঠা প্রতিযোগিতা ২৩) ঘুড়ি ওড়ানো ২৪) বউ-শ্বশুর খেলা ২৫) গাড়ি চালানো খেলা ২৬) সাঁতার প্রতিযোগিতা ২৭)
পদ্মপাতার জল খেলা ২৮) রান্নাবাটি ২৯) মাটির পুতুল তৈরি ৩০) বালিশ যুদ্ধ ৩১) মুখ বাঁকানো খেলা ৩২) ছড়ার খেলা ৩৩) চিচিং ফাঁক ৩৪) জলে-পাহাড়ে খেলা ৩৫) মিউজিকাল চেয়ার ৩৬) গান গাওয়া খেলা ৩৭) নাচ প্রতিযোগিতা ৩৮) নাম ধরে ডাকা খেলা (ডাবু) ৩৯) কার্ড গেম ৪০) Nintendo Brick Game ৪১) Nokia Snake গেম ৪২) DX Ball, Mario, Road Rash ৪৩) নাটক নকল খেলা ৪৪) ডায়াল প্যাড মোবাইল গেম ৪৫) কাঠ খেলনা যুদ্ধ ৪৬) কাঠি দিয়ে টেনিস ৪৭) অভিনয়ের খেলা ৪৮) বই লুকানো খেলা ৪৯) চুপিচুপি চুরি ৫০) ফালুদা বানানো প্রতিযোগিতা।এই সব খেলায় মিশে ছিল সম্পর্ক, আবেগ, বন্ধুত্ব আর একসাথে বড় হয়ে ওঠার শিক্ষা। না ছিল ফেসবুক, না ছিল ইউটিউব—তবুও আমরা আনন্দে ভরপুর ছিলাম। ২০০০ সালের পর ঘরে ঘরে টিভি আসে। তখন এক চ্যানেলেই চলত সব। বিটিভি ছিল আমাদের বিনোদনের একমাত্র জানালা। নাটক মানেই ছিল পরিবার একসাথে বসে দেখা। প্রতিটি চরিত্র যেন নিজের পরিবারের একজন ছিল।সেই সময়ের জনপ্রিয় নাটক: কোথাও কেউ নেই, এইসব দিনরাত্রি, আজ রবিবার, ভাঙনের শব্দ শোনা যায়, বহুব্রীহি, সংশপ্তক, রক্ত গোলাপ, জলছবি, অপি করিম-জাহিদ হাসান-আফসানা মিমির অভিনীত ঈদ নাটক, ইত্যাদি, হাউসফুল, সাকসেস, শিউলি, চাবিকাঠি, একাত্তর।সন্ধ্যায় ‘ইত্যাদি’ দেখা ছিল পারিবারিক ঐতিহ্য। শাবানা–আলমগীরের সিনেমা কিংবা মান্না–রিয়াজ–ওমর সানীর ছবি ছিল উৎসবের মতো। ২০১০ সালের পর টাচ মোবাইল আসে। অ্যান্ড্রয়েড ফোনের আগমনে বদলে যায় বিনোদনের ধরন। একদিকে টিভি নাটক আরেকদিকে হাতের মোবাইল স্ক্রিন। শিশুদের জীবনে আসে নতুন নাম—Subway Surfers, Temple Run, Clash of Clans, Free Fire, PUBG।বন্ধুর ডাক "চলো খেলতে যাই" বদলে যায় "তোর মোবাইলে ডেটা আছে?" মাঠ ফাঁকা হয়ে যায়। গুল্লি, মারবেল, ব্যাডমিন্টনের ব্যাট পড়ে থাকে এক কোনায়। ক্রিকেট খেলার ব্যাট-প্যাড আর ইটের স্ট্যাম্প স্মৃতি হয়ে ওঠে। তবুও আমরা সৌভাগ্যবান। আমরা গুল্লি খেলেছি, মারবেল হাতে ঘুরিয়েছি, সাতছাড়ায় দৌড়েছি, ঈদের নাটক দেখে মুগ্ধ হয়েছি, পুকুরে সাঁতার কেটেছি, ব্যাট ভেঙে গেলে পেপার দিয়ে জোড়া লাগিয়েছি।এই ছিল আমাদের জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়। এখনকার শিশুরা সেই আনন্দ জানে না। তারা চেনে ভিউস, স্ক্রোল, ইনবক্স—কিন্তু জানে না বন্ধুরা মিলে ফুটবল খেলতে গিয়ে কাদায় পড়ে যাওয়ার আনন্দ।শেষ কথা: শৈশব একবারই আসে। আমাদের শৈশব এসেছিল মাঠে, খেলায়, প্রকৃতির ভেতর দিয়ে। এখনকার শিশুরাও যেন সেই স্বাদ পায়—এটা আমাদের দায়িত্ব। অন্তত বছরে একবার হলেও গুল্লি বানিয়ে দাও, পুতুল খেলা শেখাও, মারবেল হাতে তুলে দাও। যাতে ওদের শৈশবটাও হয়ে ওঠে জীবনের সবচেয়ে সুন্দর সময়।