বাংলাদেশি' তকমায় নিজ দেশের বাঙালি মুসলমানদের বন্দুকের মুখে তাড়িয়ে দিচ্ছে ভারত – অভিযোগ HRW ও ওয়াইসির

বাংলাদেশি' তকমায় নিজ দেশের বাঙালি মুসলমানদের বন্দুকের মুখে তাড়িয়ে দিচ্ছে ভারত – অভিযোগ HRW ও ওয়াইসির

 আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (HRW) এর বিস্ফোরক প্রতিবেদন

ভারত সরকার বাঙালি ভাষাভাষী মুসলমানদের অবৈধভাবে বাংলাদেশে বন্দুকের মুখে পুশব্যাক করছে—এমন অভিযোগ করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (HRW)। গত মে থেকে জুনের মাঝামাঝি পর্যন্ত, কোনো প্রকার আইনি প্রক্রিয়া বা শুনানি ছাড়াই, কমপক্ষে ৮০০ থেকে ১৫০০ জন নাগরিককে জোর করে সীমান্ত পার করানো হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

“এই অভিযানে এমনকি বহু ভারতীয় নাগরিককেও বাংলাদেশি বলে নির্বাসিত করা হয়েছে, শুধুমাত্র তাঁদের ধর্ম ও ভাষা দেখে।”

— Elaine Pearson, এশিয়া পরিচালক, HRW

বাস্তব অভিজ্ঞতা: মানবাধিকার লঙ্ঘনের নীরব কান্না

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—একাধিক নারী, শিশু, বৃদ্ধ—যাদের কারো কাছে ভারতের ভোটার আইডি, আবার কারো হাতে আধার কার্ড ছিল—তাদের চোখের সামনে দলিলপত্র ছিঁড়ে ফেলে BSF (Border Security Force)। এরপর তাদের উপর রাবার বুলেট ছুড়ে নির্মমভাবে সীমান্ত পার করানো হয়।

 এক অভিবাসী বলেন:

“আমি ভারতের নাগরিক, আমার দাদারও জমি ছিল ওখানে। তবু রাইফেলের মুখে বাংলাদেশে ঠেলে দিল।”

আরেক তরুণী বলেন:

“আমার শুধু দোষ, আমি মুসলমান, আমি বাংলা বলি। তাই আমি বাংলাদেশি?”

AIMIM নেতা আসাদউদ্দিন ওয়াইসির তীব্র প্রতিবাদ

এই ঘটনার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে আজ হায়দরাবাদে AIMIM প্রধান আসাদউদ্দিন ওয়াইসি সাংবাদিকদের বলেন—

“নিজেদের দেশের নাগরিকদেরও বন্দুকের জোরে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে! শুধু বাংলা ভাষা বললেই তারা অবৈধ? এটি জাতীয়তাবাদ নয়, এটি বিদ্বেষমূলক জাতিচ্যুতি।”

তিনি আরও বলেন, এভাবে বাঙালি মুসলমানদের উপর সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিতে অবিচার করা হচ্ছে এবং এটা পুরোপুরি অসাংবিধানিক ও মানবাধিকার লঙ্ঘন।

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া: “লজ্জার চূড়ান্ত!”

মমতা ব্যানার্জি, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী, এই ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন—

“একটি ভাষার ওপর বৈষম্য চালিয়ে এক জনগোষ্ঠীকে নিষ্পেষণ করা হচ্ছে। বাঙালি ভাষা এখন অপরাধের তকমা?”

তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের এই পদক্ষেপকে “সাংবিধানিক পরিধি ও মানবতা উভয়ের লঙ্ঘন” বলে অভিহিত করেন।

 রাজনৈতিক বিভাজনের পরিণতি

এই ঘটনা শুধু ভারতীয় উপমহাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেই নয়, বাংলাদেশ ও ভারতের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে চরম চাপ তৈরি করতে পারে বলে ধারণা করছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা। সীমান্তে বিশ্বাসভঙ্গ, মানবপাচার এবং বৈশ্বিক সংবেদনশীলতা বাড়বে বলেও তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

মানবতার আহ্বান 

 "ভাষা আর ধর্মকে শত্রু হিসেবে দেখার রাজনীতি যে কত ভয়ংকর হতে পারে, তা আমরা বহুবার দেখেছি। এবার যেন সেই দাহ ফের শুরু না হয়—এই অঞ্চলে নয়, কারো বুকেও নয়।"

– সম্পাদকীয় মন্তব্য