গ্রেপ্তার হলেন সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক!

তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের বিতর্কিত রায়দাতা প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহসহ একাধিক মামলা, ডিবির হাতে গ্রেপ্তার। আইনজীবীদের তীব্র প্রতিক্রিয়া।


আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে, রাজধানীর ধানমণ্ডির নিজ বাসা থেকে সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক-কে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তাকে গ্রেপ্তার করে মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়েছে।
এই গ্রেপ্তার নিয়ে এক ধরনের রাজনৈতিক এবং আইনি আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে দেশজুড়ে। তিনি বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম কোনো সাবেক প্রধান বিচারপতি, যিনি গ্রেপ্তারের মুখোমুখি হলেন।

সাবেক প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে তিনটি মামলা দায়ের রয়েছে, যার মধ্যে:

1. নারায়ণগঞ্জ ফতুল্লা থানায় রাষ্ট্রদ্রোহ ও সংবিধান লঙ্ঘনের অভিযোগে মামলা।

 (অভিযোগ, খায়রুল হক তার রায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে রাজনৈতিক সংকট ও অসাংবিধানিক প্রভাব বিস্তার করেছেন।)

2. ঢাকার যাত্রাবাড়ী থানায় রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র ও রাজনৈতিক পক্ষপাতের অভিযোগে মামলা।

3. আরেকটি মামলা সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির একটি অংশের পক্ষ থেকে করা, যেখানে বলা হয়েছে তিনি “জুডিশিয়াল ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন”।

ডিবি সূত্র জানায়, প্রাথমিকভাবে একটি মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে, তবে অন্য মামলাগুলোর তদন্ত চলমান।

খায়রুল হক ২০১০-২০১১ সাল পর্যন্ত প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার সময়েই সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়।

সেই রায়কে কেন্দ্র করে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা, নির্বাচনী বিশ্বাসযোগ্যতা হ্রাস, এবং গণতান্ত্রিক অবরুদ্ধতা শুরু হয় বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন।

সুপ্রিম কোর্টের একজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী বলেন:

“যে ব্যক্তি জাতিকে সংঘাত ও দ্বিধার মধ্যে ঠেলে দিয়েছিলেন, আজ তিনি আইনের কাঠগড়ায়—এটা সময়ের দাবি ছিল।”

জাতীয় আইনজীবী ফোরাম এক বিবৃতিতে জানায়:

 “এই গ্রেপ্তার কোনো ব্যক্তি নয়, বরং বিচার বিভাগের ভাবমূর্তির জন্য একটি যুগান্তকারী বার্তা।”

অন্যদিকে কিছু রাজনৈতিক মহল এটিকে “প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ” বলে মন্তব্য করেছে।

খায়রুল হকের অতীত ও বিতর্কিত ভূমিকা

প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১০ – ১৭ মে ২০১১

আইন কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবেও দীর্ঘদিন কর্মরত ছিলেন।

তার সময়ই পঞ্চম সংশোধনী ও বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায় হয়, তবে সবচেয়ে বিতর্কিত রায় ছিল তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিল।

গ্রেপ্তারের ভিডিও ফুটেজ ইতোমধ্যে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। জনসাধারণের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কেউ বলছেন "দ্রুত বিচার হওয়া উচিত", আবার কেউ বলছেন "প্রতিহিংসা নয়, বিচার হওয়া উচিত সংবিধান অনুযায়ী"।

একজন সাবেক প্রধান বিচারপতির গ্রেপ্তার—এটি কেবল একটি আইনি ঘটনা নয়, বরং এটি বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থা ও রাজনৈতিক বাস্তবতার এক গভীর চিত্র তুলে ধরেছে।

খায়রুল হকের বিতর্কিত রায় আজ তাঁকে নিজেই এক “আদালতের অভিযুক্ত” হিসেবে দাঁড় করিয়েছে।

আপডেট থাকবে: আগামীকাল আদালতে তোলা হতে পারে খায়রুল হককে। আদালতের রায় অনুযায়ী তার রিমান্ড, জামিন, কিংবা জেল হেফাজতের বিষয় নিশ্চিত হওয়া যাবে।