বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্কের নতুন যুগ: ভিসা-মুক্ত প্রবেশে ঐতিহাসিক চুক্তি

বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্কের নতুন যুগ: ভিসা-মুক্ত প্রবেশে ঐতিহাসিক চুক্তি

বাংলাদেশ ও পাকিস্তান কূটনৈতিক ও সরকারি পাসপোর্টধারীদের জন্য ভিসা-মুক্ত প্রবেশের ঐতিহাসিক চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে। দুই দেশের মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে উত্তপ্ত সম্পর্কের মাঝে এটি একটি বিরল ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে

বাংলাদেশ ও পাকিস্তান গত কয়েক দশকে বহুবার উত্তপ্ত কূটনৈতিক সম্পর্কের মধ্যে দিয়ে গেছে। একাত্তরের ইতিহাস, অভিবাসন ইস্যু, অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতা এবং জঙ্গি আশ্রয়ের অভিযোগ – সব কিছুই সম্পর্ককে করেছে জটিল ও দূরত্বপূর্ণ।

তবে ২০২৫ সালের জুলাইয়ে দুই দেশের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের দ্বিপাক্ষিক আলোচনার পর প্রথমবারের মতো পাকিস্তান ও বাংলাদেশ সিদ্ধান্ত নেয় সরকারি কর্মচারী ও কূটনীতিকদের জন্য ভিসা-মুক্ত প্রবেশ চালু করার। এর আওতায় রাষ্ট্রদূত, দূতাবাস কর্মকর্তা, এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার অনুমোদিত প্রতিনিধি/প্রশিক্ষকরা সহজে একে-অন্যের দেশে প্রবেশ করতে পারবেন।

 দুই দেশের প্রতিক্রিয়া

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন—

“এই পদক্ষেপ কেবল কূটনৈতিক সম্পর্ক নয়, বরং দুই দেশের মাঝে যোগাযোগের সেতুবন্ধন তৈরি করবে।”

পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো বলেন—

 “দুই মুসলিম দেশের মধ্যে সম্পর্ক জোরদার করা আমাদের নৈতিক ও কৌশলগত দায়িত্ব।”

তবে কিছু বিশ্লেষক সতর্ক করেছেন—

 “এই উদ্যোগ বাস্তবিক সম্পর্ক উন্নয়নের সূচনা হতে পারে, তবে সতর্কতা ও মনোযোগ জরুরি। ১৯৭১-এর যুদ্ধের স্মৃতি এখনো বাংলাদেশের জন্য স্পর্শকাতর।”

 ভারতের সতর্ক দৃষ্টি

এই চুক্তি ভারতের নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মধ্যে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

দিল্লি টাইমস-এর মতে:

 “পাকিস্তান ও বাংলাদেশের কাছাকাছি আসা ভারতের নিরাপত্তা ও কূটনীতিতে নতুন সমীকরণ আনবে।”

ভারতের শীর্ষ নিরাপত্তা সংস্থাগুলো এই ভিসা-মুক্তি চুক্তিকে নজরদারিতে রেখেছে এবং আগামী BIMSTEC ও SAARC আলোচনাতেও এ বিষয়ে অবস্থান স্পষ্ট করা হবে বলে জানায় ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

আঞ্চলিক রাজনীতির সম্ভাব্য পরিবর্তন

SAARC-এ নতুন গতি: বাংলাদেশ-পাকিস্তান সমঝোতা SAARC-এর ভবিষ্যৎ পুনর্জাগরণে ভূমিকা রাখতে পারে।

ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে চাপ: ভারত চাইবে বাংলাদেশকে আরও বেশি কাছে টানতে, না হলে কৌশলগত শূন্যতা সৃষ্টি হতে পারে।

চীন ও তুরস্কের প্রভাব: পাকিস্তানকে ঘিরে থাকা চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড প্রকল্প ও তুরস্কের ইসলামী নেতৃত্ব উদ্যোগে বাংলাদেশ জড়াবে কি না, সেটাও পর্যবেক্ষণযোগ্য।

সাধারণ জনগণের জন্য কি এই চুক্তি?

না, এই চুক্তি শুধুমাত্র, কূটনীতিক, রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তা, সরকারি অনুমোদিত কর্মসূচিতে যুক্ত ব্যক্তিদের জন্য।

সাধারণ পাসপোর্টধারীদের ক্ষেত্রে ভিসা নীতির পরিবর্তন এখনো হয়নি।

বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্ক বহু বছর ধরে নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আজ এক নতুন পর্যায়ে পা রাখলো। এই ভিসা-মুক্তি চুক্তি ভবিষ্যৎে বন্ধুত্বপূর্ণ ও যৌথ অগ্রগতির দ্বার খুলে দিতে পারে—যদি উভয় দেশ আন্তরিকতা, স্বচ্ছতা ও আস্থা বজায় রাখতে পারে।